প্রচ্ছদ > খেলা > অন্যান্য

অপ্রচলিত খেলার অজানা কাহিনি

article-img

চুকবল, সেপাক টাকরো, বাশাআপ, বুত্থান, থ্রোবল, জুজুত্সু, খিউকুশিন—এগুলো আসলে কী খেলা, জানতে রীতিমতো গুগল করতে হয়। চুকবল হ্যান্ডবলেরই একটা ধরন, সেপাক টাকরো পায়ে ভলিবল খেলার মতো। বাশাআপকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশি মার্শাল আর্ট, বুত্থানও মার্শাল আর্ট, তবে সেটার উৎপত্তি নেপালে। এমন সব অপ্রচলিত খেলার অ্যাসোসিয়েশন হয়ে গেছে অনেক, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সেগুলোকে স্বীকৃতিও দিয়েছে।

 

 

‘জানি না এসব ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশন কেন করা হচ্ছে। যেসব খেলা আমরা চিনিই না, নামই শুনিনি কখনো, সেগুলো করার কোনো যৌক্তিকতা আছে কি না আমার জানা নেই। আমাদের মূল খেলা ফুটবল, ক্রিকেট, হকি। এগুলোই আমরা চালাতে পারি না।

 

 

জনপ্রিয় ইনডোর গেমগুলো ঠিকঠাক চলছে না। সেখানে এই অপ্রচলিত অ্যাসোয়েশনগুলো কেন হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে, এটা একটা প্রশ্ন।’ বলছিলেন সাবেক কৃতী টেবিল টেনিস খেলোয়াড় জোবেরা রহমান লিনু। তিনি আরেকটি ফেডারেশনের নাম যোগ করলেন ‘রোয়িং’, ‘সারা বছর উনাদের কাছ থেকে শুনি, উনারা অনুশীলন করার জায়গা পান না।

 

তো, এমন একটি ফেডারেশন বছরের বছর বয়ে বেড়ানোর যৌক্তিকতা কী?’

 

ক্রীড়া পরিষদের অধীনে আছে ঘুড়ি অ্যাসোসিয়েশনও। এটা প্রতিযোগিতামূলক খেলা হিসেবে কিভাবে স্বীকৃতি পায়, সেটিও একটি প্রশ্ন। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মৃধা জানিয়েছেন, ‘এটা সেই অর্থে প্রতিযোগিতামূলক খেলা নয়, আমরা জানি। তবে বিভিন্ন উৎসবে আমরা নানা রকম প্রতিযোগিতারও আয়োজন করে থাকি।’ ঘুড়ি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও লেখক ড. জাফর ইকবাল।

 

 

জাপানের একটি কারাতের ধরন খিউকুশিন ক্রীড়া পরিষদের সর্বশেষ অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে যুক্ত হয়েছে, সেটির সভাপতি আবার ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। চুকবলের সভাপতি ছিলেন আ জ ম নাসির উদ্দিন, মার্শাল আর্ট কনফেডারেশনে হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা সভাপতি ছিলেন বুত্থান অ্যাসোসিয়েশনে। ‘কিছু প্রভাবশালী লোককে ফেডারেশনের সভাপতি বানিয়ে মূলত এই অপ্রচলিত অ্যাসোসিয়েশনগুলো ক্রীড়া পরিষদের অনুমোদন নিয়ে নেয়। আমি অনেক প্রতিবাদ করেছি এটা নিয়ে। বলেছি ক্রীড়াঙ্গনটাকে তো আপনারা জগাখিচুড়ি বানিয়ে ফেলছেন। ১৫-২০ বছর ধরেই এগুলো হয়ে আসছে।’ বলেছেন বিকেএসপি ও এনএসসির সাবেক পরিচালক ফারুকুল ইসলাম।

বাংলাদেশে এক মার্শাল আর্টেরই ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন আটটি। জুডো, কারাতের পর তায়কোয়ান্দো, উশু ঢুকেছে। এরপর একে একে যুক্ত হয়েছে বুত্থান, বাশাআপ, খিউকুশিন ফেডারেশন। তায়কোয়ান্দোর আবার দ্বিতীয় একটি অ্যাসোসিয়েশন আছে আন্তর্জাতিক তায়কোয়ান্দো নামে। এত কিছুর পর আবার মার্শাল আর্ট কনফেডারেশনও আছে আলাদাভাবে। ‘মার্শাল আর্টে অনেকেই আছেন, যাঁরা কোনো একটা ফেডারেশনে সুযোগ না পেয়ে নিজেই একটা অ্যাসোসিয়েশন করে ফেলেছেন। সেগুলো কতটা খেলা হয়, আদৌ হয় কি না আমার জানা নেই।’ নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলছিলেন জুডোর এক কর্মকর্তা। এরই মধ্যে জুজুত্সু অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম নারী খেলোয়াড়কে যৌন নিগ্রহের দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

রোলার স্কেটিং বিশ্বকাপ উপলক্ষে পল্টন ময়দানে রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্স হয় ২০১৭ সালে। তবে সেই বিশ্বকাপের পর কমপ্লেক্সটি সেভাবে মুখর হয়নি আর। অপ্রচলিত খেলার কয়েকটি, যেমন—চুকবল, থ্রোবল এখানে হয়েছে বিভিন্ন সময়। খেলাগুলো খুবই অনিয়মিত। সেপাক টাকরোর সাধারণ সম্পাদক ফারুক ঢালি যেমন বলেছেন, ‘স্পন্সরের অভাবে নিয়মিত টুর্নামেন্ট করা কঠিন। ২০১২ সালে অ্যাসোসিয়েশন হওয়ার পর এ পর্যন্ত আমরা পাঁচটি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ করতে পেরেছি।’ তবে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত কিংস কাপে তারা নিয়মিতই অংশ নেয় বলে জানিয়েছেন। ঢালি আর্চারি ফেডারেশনের কর্মকর্তা হিসেবেই পরিচিত। আর্চারির সাধারণ সম্পাদক রাজীব উদ্দীন আহমেদ আবার এই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।